রবি
সিএনজিতে
বসে
ঘামছে,
তার
ভেতরের
গেঞ্জি
ভিজে
জবজব
করছে,
শরীরে
সেঁটে
আছে
সেই
কখন
থেকে।
মাথা
থেকে
কপাল
বেয়ে
ঘাম
নামছে,
গলায়
বিজবিজে
ঘাম,
উটকো
গন্ধ
ছড়াচ্ছে।
একটু
পরপর
সে
হাতের
ঘামে
ভেজা
তালু
মুছে
নিচ্ছে
হাঁটুর
কাছে
প্যান্টের
কাপড়ে।
শার্টের
বোতামগুলো
খুলে
দিয়েছে
অনেক
আগেই
কিন্তু
বাতাস
নেই,
ভেতরে
ঢুকছে
না।
সামনের
গাড়িটা
অ্যাকজস্ট
পাইপ
দিয়ে
ভরভর
করে
ধোঁয়ো
ছাড়ছে,
তার
ঝাপটা
এসে
লাগছে
গায়ে,
গরম
বাড়িয়ে
দিচ্ছে
তাতে,
উৎকট
গন্ধে
পেটের
নাড়িভুঁড়ি
উলটে
দেওয়ার
মতো
হচ্ছে।
পাশের
বাস
থেকে
কে
যেন
বমি
করে
দিলো,
ডাল,
সবজি
এসে
পড়লো
তার
পাশেই।
ওয়াক্
ওয়াক্
শব্দটা
তার
কানের
খুব
কাছে।
ইঞ্জিনের
শব্দ
ছাপিয়ে
সেটা
শোনা
যাচ্ছে।
থেমে
থাকা
বাস,
কার,
সিএনজি-- সবগুলো
ঘামছে
রোদে।
আকাশে
সূর্য
সিংহের
মতো
গর্জাচ্ছে।
রবি জ্যামে
আটকে
আছে,
তার
সামনে-পেছনে,
দুদিকে
নানা
ধরনের
গাড়ি,
বাস,
টেম্পো
এমনকি
ট্রাকও।
সবাই
আটকে
আছে
জ্যামে
অনেকক্ষণ
থেকে।
কয়েকটা
মোটরসাইকেল
এঁকেবেঁকে
পার
হয়ে
গেল
গর্জন
করতে
করতে।
তাদের
দিকে
তাকিয়ে
মনে
মনে
ভাবলো
রবি,
তাকেও
একটা
মোটরসাইকেল
কিনতে
হবে।
চালানো
শিখে
নিতে
সময়
নেবে
না।
পয়সার
সাশ্রয়
হবে।
সবচেয়ে
বড়
কথা,
এভাবে
রাস্তায়
আটকে
থাকতে
হবে
না।
মোটরসাইকেলের
অনেক
সুবিধা,
অনেকে
সেজন্য
মোটরসাইকেল
কিনছে।
বিদেশে
যাওয়ার
আগে,
যদি
যাওয়া
হয়,
বিক্রি
করে
দেবে।
ছোট
ভাইকেও
দিয়ে
যেতে
পারে
অল্প
দামে।
কিছুক্ষণ পর সে সিএনজিচালককে অসহিষ্ণু হয়ে জিজ্ঞাসা করে, কী হলো?
নড়ছে
না
কেন
গাড়ি-টাড়ি?
সিএনজিচালক ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়েছে, শুধু শুধু
গ্যাস
পোড়ানোর
মানে
হয়
না
ভেবে।
তার
মুখ
দেখা
যায়
না,
সে
সামনের
দিকে
তাকিয়ে
আছে
নির্বিকার
হয়ে।
পেছন
থেকে
তার
কাঁধের
ওপর
গড়িয়ে
পড়া
ঘাম
দেখতে
পাচ্ছে
রবি।
একটু
পর
তার
নিস্পৃহ
স্বর
শোনা
গেল,
জ্যাম
লাগছে।
রবি বলে, তা তো
দেখতেই
পাচ্ছি।
কিন্তু
জ্যাম
ভাঙবে
কখন?
কেমনে কমু? সিএনজিচালকের স্বরে
উদাসীনতা।
একটু
যেন
বিরক্তও।
তাকে
জিজ্ঞাসা
করা
ঠিক
হয়নি।
সে
কী
করে
বলবে,
তার
জানার
কথা
নয়।
সে
অভ্যস্ত
হয়ে
গিয়েছে
জ্যামে
থেকে।
সবাই
অভ্যস্ত
এখন।
বড়লোক,
মধ্যবিত্ত,
নিুবিত্ত,
গরিব
মানুষ
যারাই
রাজধানীর
রাস্তায়
চলাফেরা
করে
সবার
কাছেই
জ্যাম
বেশ
সুপরিচিত।
নতুন
কিছু
না।
সর্দি-কাশির
মতো
মাঝে
মাঝে
হয়,
এমন
অস্বাভাবিকও
নয়।
শ্বাস-প্রশ্বাস
ফেলার
মতো
স্বাভাবিক
হয়ে
গিয়েছে।
দৈনন্দিন
জীবনের
অংশ।
রবিও
অভ্যস্ত
রাস্তায়
নেমে
জ্যামে
আটকে
থেকে।
কিন্তু
আজকে
হঠাৎ
যেন
তার
কাছে
অসহ্য
মনে
হচ্ছে।
সে
পকেট
থেকে
রুমাল
বের
করে
কপাল,
মুখ
আর
ঘাড়
মুছলো।
রুমালটা
ভিজে
জবজবে
হয়ে
গেল।
একটু
পর
সে
পকেট
থেকে
ওয়ালেট
বার
করে
সিএনজিচালকের
উদ্দেশে
বলে,
কত
দিতে
হবে
তোমাকে?
আমি
এখানেই
নামবো।
সামনে যাইবেন
না,
যেহানে
যাইবার
লাইগা
উঠছেন?
সিএনজিচালক
মুখ
ঘুরিয়ে
তার
দিকে
তাকিয়ে
অবাক
হয়ে
বলে
রবি টাকার নোট বের করতে করতে বলে, না। আমি
হেঁটেই
যাবো।
এভাবে
বসে
থাকতে
অসহ্য
লাগছে।
মনে
হচ্ছে
অসুস্থ
হয়ে
পড়বো।
আমাকে
এই
জ্যাম
থেকে
বেরোতে
হবে।
এখনই।
দ্যান। যা
দিতেন
তেজগাঁও
পৌঁছাইলে,
হিসাব
কইরা
সেই
টাকাই
দ্যান।
সিএনজিচালক
গম্ভীর
হয়ে
বলে।
বনানীর মোড়ে
ফুটপাত
দিয়ে
হাঁটছে
রবি।
গাড়িগুলো
এক
ঠাঁয়
দাঁড়িয়ে,
যেন
বরফ
জমাট।
কালো
ধোঁয়া
উড়ছে,
চারিদিকে
কালো
রং
ছড়িয়ে
পড়ছে।
গরমে
সবকিছু
তেতে
উঠেছে।
ভাঁপ
উঠছে,
উনুনের
ওপর
বসানো
পানিভরা
কড়াই
থেকে
যেমন
ওঠে।
যে
কয়েকটা
গাছ
দেখা
যায়
রাস্তার
পাশে
তাদের
পাতা
ঝুলে
পড়েছে
ময়লায়,
ঝলসে
গিয়েছে
রোদে
পুড়ে।
বাড়ি-ঘরগুলো
বিবর্ণ
দেখাচ্ছে,
তাদের
পলেস্তারা
খসে
পড়েছে,
রোদ
শুষে
নিতে
নিতে
তেতে
উঠেছে
সিমেন্টের
দেয়াল।
রবি
বনানীর
ভেতর
ঢুকলো
এয়ারপোর্ট
রোড
থেকে
ডানে
মোড়
নিয়ে।
আজকাল
ঘনঘন
রাস্তার
নম্বর
বদলায়।
এটা
কি
এখনো
চৌদ্দ
নম্বর
আছে
কিনা
কে
জানে।
সে
তাকিয়ে
দেখলো
রাস্তার
মোড়ে
সামনে
উঁচুতে
মস্তবড়
বিজ্ঞাপন।
মোবাইল
হাতে
বিনি
হাসি
মুখে
দাঁড়িয়ে,
পাশে
বড়
অক্ষরে
লেখা
: আমরা
দূরে
নেই।
বিনির
দাঁতগুলো
চমৎকার,
এক
সাইজের,
সমান।
হাসলে
দাঁতগুলো
ঝলমলিয়ে
ওঠে,
বিনিকে
আরো
প্রাণবন্ত
করে
তোলে।
মনে
হয়
বিলবোর্ডে
না,
নিজেই
সশরীরে
দাঁড়িয়ে
আছে।
যেন
একটা
টুথপেস্টের
চলন্ত
বিজ্ঞাপন।
তার
কল্পনা
না,
বিনি
সত্যি
সত্যিই
টুথপেস্টের
বিজ্ঞাপনে
মডেল
হয়েছিল।
খবরের
কাগজের
পাতায়,
টেলিভিশনে,
রাস্তার
পাশে
বিশাল
বিলবোর্ডে
তার
দাঁত
বের
করা
ভুবনমোহিনী
হাসিসুদ্ধ
ছবি
দিয়ে
বিজ্ঞাপন
দেখা
গিয়েছে
বেশ
অনেক
দিন।
এখনো
মাঝে
মাঝে
দেখা
যায়
কাগজে,
বিলবোর্ডেও
হয়তো
আছে।
কিন্তু
সেই
বিজ্ঞাপনের
পর
বিনি
মোবাইলের
যে-বিজ্ঞাপনে
মডেল
হয়েছে
সেটাই
এখন
বেশি
করে
দেখাচ্ছে।
কাগজে,
টেলিভিশনে
আর
রাস্তার
পাশে
বিলবোর্ডে।
হাতে
মোবাইল
সেট
নিয়ে
হাসিমুখে
দাঁড়িয়ে
আছে
বিনি,
এবারে
সমস্ত
দাঁত
বের
করে
না,
অল্প
হেসে
সে
তাকিয়ে
আছে
তার
লিচুর
মতো
গোল
গোল
চোখ
বার
করে।
পাশে
লেখা
: আমরা
দূরে
নেই।
ফুটপাতে দাঁড়িয়ে
রবি
বললো,
কিরে
তোর
গরম
লাগছে
না?
খুব
রোদ।
আমি
সিএনজি
ছেড়ে
দিলাম।
হেঁটেই
যাবো
ভাবছি।
জ্যাম
ভাঙবে
বলে
মনে
হচ্ছে
না।
ওহ
কি
গরম!
অসহ্য।
তুই
এত
রোদে
দাঁড়িয়ে
আছিস?
বিনি ওপর
থেকে
বললো,
এটাই
আমার
চাকরি।
কন্ট্রাক্ট।
এভাবে
দাঁড়িয়ে
থাকা,
হাসিমুখে
মোবাইল
হাতে
সবাই
যারা
দেখছে
তাদেরকে
আশ্বাস
দেওয়া,
আমরা
দূরে
নেই।
জানিস
না?
ধ্যাৎ। আবোল-তাবোল
বকিসনে।
দূরে
নেই
বললেই
হলো?
ওই
অতো
উঁচু
থেকে?
নেমে
আয়।
কোথাও
যাওয়া
যাক।
অনেকদিন
দেখা
হয়
না।
কোথায় যাবো?
বিনি
মুচকি
হাসে
এবার।
রবি টের
পায়,
বিনির
মুখের
সব
পরিবর্তন,
ভেতরকার
কথা
তার
মুখস্থ।
অন্যরা
না
দেখলেও
সে
দেখতে
পায়।
বিনি
এখন
মুচকি
হাসছে।
কৌতুকে,
উচ্ছলতায়
দুই
চোখে
যেন
আকাশের
তারা
সব
ভিড়
করেছে।
এই
রোদে?
পারেও
মেয়েটা।
রবি
বললো,
আয়
কোথাও
যাই।
কফি-টফি
খাই।
আমার
গলা
শুকিয়ে
গিয়েছে।
তোরও
নিশ্চয়ই
তাই।
কতক্ষণ
দাঁড়িয়ে
আছিস।
শুনে হা-হা
করে
হাসে
বিনি।
সে
ওপরে
হলেও
তার
হাসি
শুনতে
পায়
রবি।
একটু
বিরক্ত
হয়ে
বলে,
হাসছিস
কেন?
মিথ্যা
বললাম?
না। তবে
গলা
শুকিয়ে
গেছে
শুনে
কেমন
যেন
মনে
হলো।
বলে
সে
এবার
চুকচুক
করে
হাসলো।
তারপর
বললো,
আমার
গলা
শুকায়
না।
অভ্যাস
হয়ে
গিয়েছে।
এ-কাজে
নেমে
গলা
শুকালে
চলে
না।
দাঁড়া,
আসছি।
বিনি ওপর
থেকে
নেমে
আসতে
না
আসতে
বড়
রাস্তায়
গাড়ি
চলতে
শুরু
করলো।
হর্নের
শব্দ,
ইঞ্জিনের
গর্জন,
গাড়ির
চাকার
ঘ্যাসটানি
এই
সবে
মুখর
হয়ে
উঠলো
চারিধার।
একটা
বিকট
কোলাহল
সৃষ্টি
হলো
মুহূর্তে।
গাড়ির
পেছন
থেকে
কালো
ধোঁয়া
লাফিয়ে
লাফিয়ে
উঠলো
ওপরে,
যেন
ঘুমের
শেষে
একটা
দৈত্য
জেগে
উঠেছে।
বলছে,
হাউ
মাউ
খাউ,
কিসের
গন্ধ
পাউ?
বিনি তার
পাশ
দিয়ে
হাঁটতে
হাঁটতে
বললো,
তুই
এদিকে
কোথায়
যাচ্ছিলি?
কখনো
দেখিনি
আগে।
আমি
তো
রোজই,
সবসময়
দাঁড়িয়ে
থাকি।
রবি বিনির
হাত
ধরে
বললো,
জ্যাম
দেখে
নেমে
পড়েছি।
তেজগাঁও
যাচ্ছিলাম।
আমার
অফিসে।
জ্যামে
আটকে
থেকে
বিরক্ত
হয়ে
নেমে
পড়লাম।
বিনি হেসে
বললো,
তারপর
উলটো
দিকে
হাঁটতে
শুরু
করেছিস?
এদিক
দিয়ে
তেজগাঁও
যায়
না
কেউ।
অনেক
ঘোরা
পথ।
মহাখালী
হয়ে
যাবার
কথা
তোর।
রবি বিনির
হাতে
চাপ
দিয়ে
বললো,
তোকে
দেখার
জন্যই
এ পথে
এলাম।
জানি
তুই
দাঁড়িয়ে
আছিস।
হাসছিস।
বলছিস,
আমরা
দূরে
নেই।
বিনি তার
হাত
তুলে
রবির
ঘাড়ে
চাটি
মেরে
বললো,
মিথ্যে
বলিস
নে।
আমাকে
দেখতে
তোর
বয়ে
গিয়েছে।
আজকাল
তো
ফোনও
করিস
না
তেমন।
ফোন করি।
তোর
লাইন
বিজি
থাকে।
তাই
টের
পাস
না।
এসএমএস করিস
না
কেন?
সবাই
করে।
এসএমএস
মিস
হয়
না।
রবি বলে,
অতো
ধৈর্য
নেই
আমার।
অক্ষরগুলো
বেছে
বেছে
টেপা,
বড়
সময়
নেয়।
বিনি বললো, একসময় এসএমএস
করতিস।
তখন
ধৈর্য
ছিল।
রবি বললো,
হ্যাঁ।
একসময়
অনেক
ধৈর্য
ছিল।
আস্তে
আস্তে
সেটা
কমে
এসেছে।
তাছাড়া
বড়
ব্যস্ত
থাকতে
হয়।
তারপর
বিনির
দিকে
তাকিয়ে
বললো,
তুইও
তো
ব্যস্ত
থাকিস।
তোর
সময়
হয়
পুরনো
বন্ধুদের
খোঁজখবর
নেওয়ার?
শুনে বিনি
দীর্ঘশ্বাস
ফেলে।
তারপর
রাস্তার
দিকে
সাজানো
দোকানপাটের
সামনের
দিক
দেখতে
দেখতে
বলে,
দৌড়াচ্ছি
রে
রবি।
দৌড়াচ্ছি।
লোনলিনেস
অফ
অ্যা
লং
ডিসট্যান্স
রানার।
সেরকম
ব্যাপার।
কেন দৌড়াচ্ছিস
এত?
রাশ
টেনে
ধরলেই
হয়।
তখন
লোনলি
বোধ
করবি
না।
রবি
বিনির
হাতে
চাপ
দেয়।
না দৌড়ে
উপায়
নেই।
পিছিয়ে
পড়তে
হবে।
এখনো
কতদূর
যাওয়া
বাকি।
তারপর
রবির
দিকে
তাকিয়ে
বিনি
বলে,
তোর
বিদেশে
যাওয়ার
কী
হলো?
আগে
খুব
বিদেশ-বিদেশ
করতি।
কাগজপত্র জমা
দিয়েছি।
ইন্টারভিউতে
হয়তো
ডাকবে।
যদি
মর্জি
হয়।
তারপর
ভিসা
দেবে।
যদি
মর্জি
হয়।
এই নিয়ে
ক’বার
দিলি
ইন্টারভিউ?
কত
এম্বাসিতে?
মনে নেই।
বেশ
কয়েকবার
হবে।
হু। তুই
বেশ
নাছোড়বান্দা।
লেগে
আছিস।
বিদেশে
না
গিয়ে
ছাড়বি
না।
রবি বলে,
চেষ্টা
করছি
তো।
দেখা
যাক।
এখন
বল
কী
খাবি?
অনেকগুলো
রেস্তোরাঁ
দেখা
যাচ্ছে।
বিনি সামনে
তাকিয়ে
বললো,
এই
রাস্তাটায়
অনেক
ফাস্টফুড
শপ,
বুটিক।
বেশ
লাইভলি।
তারপর
ভালো
করে
দেখে
বললো,
চল
সিসা
লাউঞ্জে
যাই।
রবি একটু
অবাক
হয়ে
বললো,
এই
দুপুরে
সিসা
লাউঞ্জে
কেন?
অর্ডিনারি
কফি
শপ
কিংবা
রেস্তোরাঁয়
ঢুকলে
হয়
না?
এখন
লাঞ্চের
সময়।
ফর অ্যা
চেঞ্জ।
কফিশপে
গিয়ে
খাওয়া
হয়,
গল্পও
হয়।
কিন্তু
কোনো
কিক
নেই।
সিসা
স্মোক
করার
অভিজ্ঞতা
অন্য
রকমের।
ঠিক
ড্রাগসের
মতো
না
আবার
সিগারেট
খাওয়ার
মতোও
না।
তুই
সিসা
স্মোক
করিস
না?
কত
সিসা
লাউঞ্জ
এখন
ঢাকায়।
গুলশান,
বনানী,
ধানমণ্ডি।
রবি বললো,
করেছি।
তোর
সঙ্গেই
তো
প্রথম
গেলাম।
খুব
একটা
মজা
পাইনি।
মজা পাসনি?
বলিসনি
তো
আগে।
অবাক
করলি
তুই।
অমন
ফ্যান্টাস্টিক
এক্সপেরিয়েন্স।
কী
সব
সুগন্ধ!
চেরি,
মেনথল,
স্ট্রবেরি
আরো
কত।
ভাবতেই
ভেতরটা
লাফিয়ে
ওঠে।
শুনেছি ওরা
তামাকের
সঙ্গে
অন্য
কিছুও
মেশায়।
নেশার
জন্য।
রবি
বললো।
হো-হো
করে
হেসে
বিনি
বলে,
মেশাক
না।
তাতে
ক্ষতি
হয়
না
কিছু।
যা
দেয়
পরিমিত
পরিমাণেই
দেয়।
ফুর্তিটা
যেন
বাড়ে।
তুই
ফুর্তি
করা
ছেড়ে
দিয়েছিস
মনে
হচ্ছে।
তোর
কী
হলো
রে
রবি?
এমন
ছিলি
না।
বলে
সে
তার
হাতের
কনুই
দিয়ে
অল্প
করে
গুঁতো
দেয়
রবির
পেটে।
ফুটপাতের
উলটো
দিক
থেকে
আসতে
থাকা
এক
মহিলা
তাদের
দেখে
সরে
যান।
একটা
লাল
টকটকে
গাড়ি
পাশ
দিয়ে
হুস
করে
বেরিয়ে
গেল
ধুলো
উড়িয়ে।
দেখে
উচ্ছ্বসিত
হয়ে
বিনি
বললো,
ওয়াও।
পোর্শ
স্পোর্টস
কার।
আই
লাভ
দ্য
কালার।
টাকা
হলে
অমন
একটা
কিনবো।
তোকে
নিয়ে
ঢাকার
রাস্তায়
ঘুরবো।
ঢাকায় স্পোর্টস
কার
চালাবার
রাস্তা
কোথায়?
আছে, আছে।
মাঝরাতের
পর
অনেক
রাস্তা
পাওয়া
যায়।
আমরা
প্রায়ই
ঘুরি
তখন।
আমরা?
হ্যাঁ, আমি আর
আমার
কোম্পানির
সিইও
জামিল
সাহেব।
খুব
ফান
লাভিং
তিনি।
ছেলেমানুষের
মতো
প্রায়।
তোর
সঙ্গে
পরিচয়
করিয়ে
দেবো
যদি
চাস।
তার
অনেক
কানেকশন।
তিনি
খুব
পরিশ্রম
করেন
আর
তারপর
কত
কী
যে
করতে
চান
ফুর্তির
জন্য
ভাবতেও
পারবি
না।
তিনি
বলেন,
একটাই
জীবন।
ইউ
মাস্ট
এনজয়।
ওয়ার্ক
অ্যান্ড
এনজয়।
এটাই
তার
জীবনের
মোটো।
দুটোর
ওপরই
জোর
দেন
তিনি।
চমৎকার
ফিলোসফি।
তাই
না।
রবি সামনে ডানদিকে একটা দোকান দেখিয়ে বলে, ওই যে
একটা
সিসা
লাউঞ্জ
দেখা
যাচ্ছে।
চল
যাই।
বিনি রাস্তা পার হতে হতে বললো, আর ইউ
সিওর?
তোকে
জোর
করে
নিয়ে
যাচ্ছি
না
তো?
রবি সিসা লাউঞ্জের সামনে এসে দরোজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো, আমার এই
তো
প্রথম
না।
এখানে
না
হলেও
সিসা
লাউঞ্জে
গিয়েছি।
তোর
সঙ্গেই
গিয়েছি।
অন্যদের
সঙ্গেও
গিয়েছি।
এখন
যাই
না
বলে
একেবারেই
যাবো
না
এমন
সিদ্ধান্ত
নিইনি।
বিনি ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো, প্রথমবার স্মোক
করার
পর
তোর
মুখের
দিকে
আর
তাকানো
যায়নি।
মুখ-চোখের
যা
অবস্থা
হয়েছিল
তোর।
মনে
হচ্ছিল
কেঁদেই
ফেলবি।
হি-হি-হি।
শুনে
রবি
কিছু
বলে
না,
বিনির
হাত
ধরে
সামনে
এগোবার
চেষ্টা
করে।
সামনে প্রথমে কিছু দেখা যায় না। ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে সমস্ত ঘর। কোথায় প্যাসেজ আর কোথায় বসবার ঘর দেখার উপায় নেই। একটু পর চোখ অভ্যস্ত হয়ে এলে দেখা গেল বড় ঘরের এক পাশে পার্টিশন দেওয়া ছোট ছোট কিউবিকল। তাদের সামনে পর্দা ঝোলানো। যেখানে পর্দা একপাশে টানা তার ভেতরে দেখা যাচ্ছে মেঝেতে বসার জন্য গদির কুশন, মাঝখানে লম্বা
আয়তাকার
নিচু
টেবিল।
টেবিলের
ওপর
বড়
হুঁকো
রাখা,
লম্বা
রুপোলি
নল
হুঁকোর
গায়ে
জড়ানো।
একটা
খোলা
কিউবিকল
দেখে
তারা
দুজন
ভেতরে
ঢুকলো।
ভেতরটা
দেখে
বিনি
বললো,
পাশাপাশি
বসবি,
না
মুখোমুখি?
তুই-ই ঠিক কর। রবি বললো ঘাড় ঝাঁকুনি দিয়ে।
বিনি হেসে বললো, পাশাপাশি। ‘আমরা
দূরে
নেই’
এটা
দেখাতে
হবে
না?
শুধু
বিজ্ঞাপনের
স্লোগান
হলেই
হবে।
বলে
সে
হি-হি
করে
হাসলো।
তারা দুজনে বসে দুপাশের কিউবিকলের ভেতর থেকে আসা টুকরো কথা শুনছে, নানা ধরনের
গন্ধ
নিশ্বাসের
সঙ্গে
নিচ্ছে
ভেতরে,
এরকম
কিছুক্ষণ
হওয়ার
পর
ওয়েটার
ভেতরে
এলো।
তার
হাতে
কাগজ
আর
পেনসিল।
বিনিই
অর্ডার
দিলো।
স্ট্রবেরি
সিসা
আর
চিকেন
স্যান্ডউইচ।
অর্ডার
দেওয়ার
পর
সে
বললো,
স্যান্ডউইচ
পরে
দেবেন।
অর্ডার
নিয়ে
ওয়েটার
চলে
গেল।
বিনি
বললো,
আজ
আমি
তোকে
ট্রিট
করবো।
বা রে, তোকে তো
আমিই
ডেকে
আনলাম।
তুই
ট্রিট
করবি
কেন?
অনেকদিন পর একসঙ্গে এলাম। তোর সঙ্গে দেখা হয় না আজকাল। আমার ইচ্ছে হচ্ছে তোকে ট্রিট করি। তারপর হেসে বললো, আমার অনেক
ইনকাম।
মডেলদের
অনেক
টাকা
দেয়
জানিস
তো।
রবি হেসে বললো, জানি। খরচ
করে
সেটা
জানাতে
হবে?
বিনি হাত দিয়ে রবির পেটে একটা গুঁতো মেরে বললো, ঠেস দিয়ে
কথা
বলিস
না।
ভালো
লাগে
না।
এখন
বল
তোর
অন্য
বান্ধবীদের
কথা।
রবি বললো, বিশেষ কিছু
বলার
নেই।
সবাই
খুব
ব্যস্ত,
প্রায়
তোর
মতো।
তারপর
একটু
থেমে
বললো,
আমার
মতো।
আমাদের
বয়সের
কারো
হাতে
খুব
সময়
নেই।
বিনি বললো, জানি। কিন্তু
তোর
কোনো
স্পেশাল
বন্ধু
নেই?
ভেরি
স্পেশাল?
যে
খুব
পাগলামি
করে,
হাসায়,
আমার
মতো?
রবি বলে, এখন সব
বন্ধুকেই
এক
মনে
হয়।
একজন
থেকে
অন্যকে
পার্থক্য
করতে
পারি
না।
অদ্ভুত
ব্যাপার
না?
আমাকেও তাই মনে হয়? কোনো চমক
নেই
বলতে
চাস?
হ্যাঁ। তাই। চমক পেতে পেতে সেই ফিলিংসটা থাকে না। আমার এমন মনে হয় আজকাল। তোর এমন মনে হয় না? রবি বিনির
দিকে
তাকায়।
বিনি ভাবতে থাকে। তাকে চিন্তিত দেখায়। যেন কিছু মনে করার চেষ্টা করছে। তার মুখে হাসি নেই। ঠোঁটে ভ্রুকুটি নিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে। ঘরের আলো-অন্ধকারেও তার কপালে দেখা যাচ্ছে একটা ভাঁজ। মুখে হাসি নেই। ঠোঁটের ভ্রুকুটি খামচে দেওয়ার মতো। চোখের পাতা একটুও কাঁপছে না।
রবি হাত দিয়ে বিনিকে অল্প ঠেলে বললো, কী হলো?
এখনই
ঝিম
মেরে
গেলি
যে।
মুখে
কথা
নেই,
চোখও
বড়
বড়
হয়ে
গিয়েছে।
বিনি কিছু বলার আগেই ওয়েটার হুঁকোর জন্য কলকে নিয়ে এসে হুঁকোয় লাগিয়ে বললো, স্ট্রবেরি। স্যান্ডউইচটা
কতক্ষণ
পর
আনবো?
রবি বিনির দিকে তাকালো। বিনির যেন তন্ময় ভাব ভেঙেছে, সে শরীর
আড়মোড়া
ভেঙে
বললো,
আধঘণ্টা
পর।
বলে
সে
হুঁকোর
নল
হাতে
নিয়ে
প্রথমে
ছোট
তারপর
দীর্ঘ
টান
দিয়ে
নাক-মুখ
দিয়ে
ধোঁয়ো
ছাড়লো।
চোখ
বুঁজে
থেকে
কিছুক্ষণ
পর
উল্লসিত
স্বরে
বললো,
ওয়াও!
দিস
ইজ
আউট
অফ
দি
ওয়ার্ল্ড।
এখনই
মাথা
ঝিমঝিম
করছে।
অনেক
ধরনের
মিউজিক
শুনতে
পাচ্ছি।
সিম্ফনি
অর্কেস্ট্রা
বাজছে
যেন।
ওয়াও!
কিছুক্ষণ হুঁকোয় সিসা টানার পর বিনি নলটা রবির হাতে দিয়ে বললো, নে। টান।
আমি
একাই
শেষ
করে
ফেলবো
মনে
হচ্ছে।
রবি নলটা হাতে নিয়ে হেসে বললো, ভালো লাগলে
আরো
এক
ছিলিম
দিতে
বলা
যাবে।
হিসাব
করার
কিছু
নেই।
তোর
শখ
হয়েছে
যখন
মিটিয়ে
নে।
বিনি মুগ্ধ হয়ে রবির গা ঘেঁষে বসে আদুরে ভঙ্গিতে বললো, হ্যাঁ। তাই।
হোয়াই
নট।
আমার
কোম্পানির
সিইও
জামিল
সাহেব
বলেছেন,
এনজয়।
ওয়ার্ক
অ্যান্ড
এনজয়।
হু।
কয়েক টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে রবি বললো, শুধু তামাক
আর
অ্যারোমা
না।
অন্য
কিছু
আছে।
মাথার
মধ্যে
যাচ্ছে
সেটা।
বিনি তার কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে ঘুমকাতুরে স্বরে বললো, হুমম। ভেরি
নাইস।
এ-ন-জ-য়।
রবি বললো, তোর সিইও
জামিল
সাহেব
খুব
এনজয়
করে।
না?
বিনি মাথা একটু উঠিয়ে উচ্ছ্বসিত গলায় বললো, করে। আমাকেও
করতে
বলে।
ব্যাংকক,
দার্জিলিং,
কাঠমান্ডু
কত
জায়গায়
নিয়ে
গিয়েছেন।
ইউরোপেও
নিয়ে
যাবেন
নেক্সট
সামারে।
তুই
ইংল্যান্ডে
গেলে
তোর
সঙ্গে
দেখা
করতে
যাবো
লন্ডনে।
তারপর
সে
তার
মাথা
রবির
কাঁধে
রাখতে
রাখতে
বললো,
তুই
লন্ডনে
কেন
যাচ্ছিস
বলিসনি
তো?
বলেছি। তোর মনে নেই। লন্ডনে যাচ্ছি ব্যারিস্টারি পড়তে।
ওওও। বলে বিনি তার মাথা রবির কাঁধে আরো ভালো করে রাখলো যেন ঘুমাবার চেষ্টা করছে। তারপর জড়ানো গলায় বললো, ব্যারিস্টারি? ব্যারিস্টার
রবি
আহমদ।
হু,
ভালোই
শোনায়।
কিন্তু
দেশে
এখন
অনেক
ব্যারিস্টার
হয়ে
গিয়েছে।
ভেরি
ক্রাউডেড।
অনেক
কম্পিটিশন।
রবি হেসে বললো, কোথায় কম্পিটিশন
নেই?
এত
মানুষের
দেশ।
সে-তুলনায়
সুযোগ
কম।
কম্পিটিশন
বাড়বেই।
তারপর
বিনির
দিকে
মুখ
ফিরিয়ে
বললো,
তোর
মডেলিংয়ে
কম্পিটিশন
নেই?
বিনি নড়েচড়ে উঠে বললো, আছে। আছে।
দারুণভাবে
আছে।
অনেক
নোংরামিও
আছে।
তোকে
সব
কথা
বলা
যাবে
না।
বুঝলি
হবু
ব্যারিস্টার।
কথা
বলা
শেষ
করে
হঠাৎ
মাথা
তুলে
রবির
হাত
থেকে
হুঁকোর
নল
টেনে
নিয়ে
বললো,
তুই
একাই
যাচ্ছিস?
আমাকে
সঙ্গে
নিতে
পারিস।
আমিও
ব্যারিস্টার
হতে
পারি।
মডেলরা
সব
পারে।
রবি তার হাত থেকে নলটা নিয়ে বললো, আস্তে আস্তে
টান।
তোর
কথা
জড়িয়ে
যাচ্ছে।
এত
তাড়া
কিসের?
বিনি হুঁকোর নলটা রবির হাতে দিয়ে বললো, তাড়া আছে।
ভেতর
থেকে
তাড়া
দিচ্ছে।
মৌসুমী
ভৌমিকের
গানটা
মনে
নেই?
‘এই
শরীরটারই
ভেতরে
পরান
নামে
কে
যেন
কে
থাকে,
আমি
তারই
ডাকে
ভেতর-বাহির
করি’। বুঝলি,
ভেতরে
কে
যেন
কে
আছে,
সেই-ই তাড়িয়ে
বেড়াচ্ছে
আমাকে।
তোকেও।
দৌড়াতে
বলছে
জোরে।
আরো
জোরে।
অনেক
দূর
যেতে
হবে
যে
আমাদের।
বলতে
বলতে
বিনির
গলা
জড়িয়ে
আসে,
প্রায়
কান্নার
মতো
শোনায়।
সে
ভাঙা
গলায়
বলে,
আমার
সিইও
বলেন
বিনি
নামটা
বদলাতে
হবে।
বিন্নি
করলে
ভালো
হয়।
বেশ
একটা
রিদমিক
সাউন্ড।
বিন্নি।
বিন্নি।
বেশ
অ্যারোটিক,
সিডাকটিভ।
বলতে
বলতে
বিনি
হাত
দিয়ে
রবিকে
জড়িয়ে
ধরার
চেষ্টা
করে,
যেন
পড়ে
যাচ্ছে।
কাঁপতে
থাকা
হাত
রবির
শরীর
ধরতে
পারে
না।
বিনির
মাথা
এলিয়ে
পড়ে
রবির
কোলে।
সেই
ভাবে
থেকে
ক্লান্ত
স্বরে
সে
বলে,
আই
অ্যাম
টায়ার্ড।
খুব
কষ্টের
রে
এই
জীবন।
দৌড়াতে
দৌড়াতে
হাঁপিয়ে
উঠি।
জোরে
জোরে
শ্বাস
ফেলি।
বলে
সে
গুনগুন
করে
গাইবার
চেষ্টা
করে
‘শরীরটারই
ভেতরে
পরান
নামে
কে
যেন
কে
থাকে...’।
রবি তার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলে, নিজেকে কেন
এত
কষ্ট
দিস?
টেক
ইট
ইজি।
পারি না। হয় না। অনেক দূর যেতে হবে। অনেক ওপরে উঠতে হবে, বলে সে
একবার
সামনে
আর
তারপর
ওপরের
দিকে
হাত
উঠিয়ে
দেখে।
তারপর
বলে,
বিজ্ঞাপনের
মডেল
থেকে
টেলিভিশনের
নাটকের
নায়িকা।
সেখান
থেকে
সিনেমার
নায়িকা।
দেশে-বিদেশে
চলচ্চিত্র
উৎসব।
পুরস্কার।
কতকিছু
অপেক্ষা
করছে,
হাতছানি
দিচ্ছে।
আমি
সব
দেখতে
পাচ্ছি।
বুঝলি
রবি।
সব
দেখা
যাচ্ছে।
সেসব
ফেলে
কোথায়
যাবো?
তার
স্বর
ক্রমেই
শিশুর
মতো
সরল
হয়ে
আসে।
রবি বলে, কিন্তু তুই
টায়ার্ড
হয়ে
পড়েছিস।
নিজেকে
কষ্ট
দিয়ে
কিছু
পাওয়ার
মানে
হয়
না।
বিনি মাথা উঠিয়ে রবির কাঁধে রেখে বলে, শরীরের কষ্ট,
শরীরের
ওপর
দিয়ে
যা
কিছু
হয়
সব
সয়ে
গিয়েছে
রে।
হ্যাঁ
মাঝে
মাঝে
মনে
কষ্ট
পাই।
সেটাই
ক্লান্ত
করে
দেয়।
শরীর
নিয়ে
ভাবার
কিছু
নেই
এখন।
এটাই
তো
পুঁজি।
শরীর
মানে
যৌবন।
শরীর
মানে
রূপ।
শরীর
মানে
মেপে
মেপে
হাসা।
এসব
কোনো
ঝামেলা
করে
না।
কিন্তু
ভেতরটা
অন্যরকম।
সেটা
মাঝে
মাঝে
হঠাৎ
করে
ঝাঁকুনি
দেয়।
বলে
সে
আবার
সুর
করে
গাইতে
থাকে
‘শরীরটারই
ভেতরে
পরান
নামে
কি
যেন
কি
থাকে,
তারই
টানে...’। সে
শেষ
করতে
পারে
না।
রবি তার কাঁধের দিকে হাত বাড়িয়ে বিনির মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলে, তুই ছেড়ে
দে
এই
কাজ।
অন্যকিছু
কর।
অসুখী
হওয়ার
মানে
হয়
না।
হঠাৎ জ্ঞান ফিরে পাওয়ার মতো উঠে বসে চোখ কচলে বিনি বলে, ছেড়ে দেবো?
বলিস
কি?
এত
দূর
এসে
ছেড়ে
দেওয়া
যায়
না।
অনেক
কাঠখড়
পোড়াতে
হয়েছে
এখানে
আসার
জন্য।
শেষ
পর্যন্ত
যেতে
হবে।
ভুলে
যাসনে
বিউটি
কনটেস্টে
প্রথম
হয়েছিলাম
আমি।
তারপর
থেকে
কত
অফার।
প্রতিদ্বন্দ্বীরা ভেঙচি কাটছে, ল্যাং মারার
চেষ্টা
করছে।
নোংরামি
এসে
ঘিরে
ধরছে
আমাকে।
অল
পার্ট
অফ
দ্য
গেম।
পাত্তা
দিলে
চলে
না।
স্যান্ডউইচ আসে। বিনি টেবিলে রাখা প্লেট থেকে স্যান্ডউইচ তুলে নেয়। চুপ করে খায়। কোনো কথা বলে না। সামনে কাঠের পার্টিশনের দিকে তাকিয়ে থাকে। কী যেন ভাবছে। রবি ঘাড় ফিরিয়ে তাকে দেখে। কিছু বলে না। সামনে, পেছনের কেবিনগুলো
থেকে
কণ্ঠস্বর
শোনা
যাচ্ছে।
ধোঁয়া
উঠে
ছড়িয়ে
পড়ছে।
নানা
রকম
গন্ধের
ককটেল।
একটা
রক
মিউজিক
শুরু
হলো।
ধম
ধম
ধম।
শব্দটা
কাঁপিয়ে
দেয়
সমস্ত
ঘর।
বুকে
ধাক্কা
মারে।
শরীর
কাঁপায়।
স্নায়ুকে
উত্তেজিত
করে।
বিনি স্যান্ডউইচ চিবুতে চিবুতে বলে, তোর লন্ডনে
না
গেলে
হয়
না?
এত
দূরে
কেন
যাবি?
রবি হেসে বলে, তাহলে ব্যারিস্টার
হবো
কেমন
করে?
ব্যারিস্টার হয়ে কী হবে? এত ব্যারিস্টার
এদেশে।
বিনি
তার
দিকে
তাকিয়ে
বলে।
তার
দৃষ্টিতে
যেন
অনুনয়।
সে
স্যান্ডউইচ
খাওয়া
শেষ
করে
বলে,
তুই
চলে
গেলে
খুব
একা
হয়ে
যাবো
রে।
শুনে রবি হাসে। তারপর বলে, তোর সঙ্গে
দেখাই
হয়
না
আজকাল।
একা
হতে
যাবি
কেন?
বিনি মাথাটা পেছন দিকে হেলিয়ে বলে, এখানে আছিস
এটা
জেনেই
অর্ধেক
দেখা
হয়ে
যায়।
মনে
হয়
ইচ্ছে
করলেই
একসঙ্গে
হওয়া
যাবে।
শুনে রবি হাসতে গিয়েও হাসে না। তার মনে হয় এখন হাসা উচিত হবে না। সে কিছু বলে না। বিনি কেন শেষের কথাগুলো বললো তা জানতে চায় না। পালটা করে বলে না, তুই মডেলিং
ছেড়ে
দে।
এত
মডেল
এদেশে।
তার
শুনতে
ভালো
লাগে
বিনি
তাকে
দেশে
থেকে
যেতে
বলছে।
খুব
জোর
দিয়ে
না,
কিন্তু
বলছে
তো।
ঠিক
সে
যেমন
বলেছিল
বিনিকে
তার
দৌড়
বন্ধ
করার
জন্য।
সে
একটু
পর
হেসে
বললো,
তোর
নাম
বদলাস
নে।
বিনি
নামটা
সুন্দর।
বিন্নি
কেমন
শোনায়
যেন।
বিনি গম্ভীর হয়ে বললো, এখনো ঠিক
করিনি।
কোনো
তাড়াহুড়ো
নেই।
রাস্তার মোড়ে এসে বিনি ওপরে উঠে গেল, সুপারগার্লের মতো।
রবি মাথা উঁচু করে ওপরের বিজ্ঞাপনটার দিকে তাকালো কিছুক্ষণ। বিনি মুখে হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামনে তাকিয়ে। তার এক হাতে মোবাইল সেট। পাশে বড় অক্ষরে লেখা : আমরা দূরে
নেই।
কিছুক্ষণ
তাকিয়ে
থেকে
রবি
জোরে
জোরে
পা
ফেলে
হেঁটে
গেল
ফুটপাত
দিয়ে।
তাকে
মহাখালী
হয়ে
তেজগাঁও
যেতে
হবে।
রোদের
খুব
তেজ,
সারা
শরীরে
ঘাম
ঝরছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন