মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়
(মূল : এন্ড্রু ব্ল্যাকম্যান)
ফরাসী-চেক ঔপন্যাসিক মিলান কুণ্ডেরার জন্ম ১ এপ্রিল ১৯২৯ সালে চেকোশ্লাভাকিয়ার ব্রনোয়। ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ফ্রান্সে বসবাস করছেন। অস্তিত্বের অসহনীয় লঘুতা, অমরত্ব, জীবন অন্য কোথাও, মস্করা, বিদায়ী ভোজসভা, হাসি ও বিস্মরণের বই প্রভৃতি পৃথিবীখ্যাত উপন্যাসগুলোর লেখক তিনি। বইগুলো সবই চেক ভাষায় লেখা। তাঁর সা¤প্রতিকতম উপন্যাস স্লথতা, আত্মগরিমা ও অজ্ঞতা এবং প্রবন্ধের বই উপন্যাসের শিল্পরূপ ও প্রতারিত ইচ্ছাপত্র ফরাসী ভাষায় লেখা।
সাদাসিধে এক তরুণী। ভালবাসে এমন একজন মানুষকে যে নিজেই কিনা তার বিশুদ্ধ প্রেম এবং দুর্নিবার নারীলিপ্সার পারস্পরিক সংঘর্ষে জর্জরিত; মানুষটির প্রেম এই তরুণীটিকে ঘিরে আবর্তিত হয়। আবার, অফুরান নারীলিপ্সার মধ্য থেকেও বিশেষ একজন পরনারীকে সে আলাদাভাবে কামনা করে। কালজয়ী উপন্যাসটির কলেবর গড়ে উঠেছে মূলত এই তিনটি চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক সংকট-সংঘাতকে উপজীব্য করেই।
আমাদের বসবাসের এই জগৎটা ভীষণ অদ্ভুত। এখানকার সবকিছুই ঘটে দৈবক্রমে, আগে থেকে জানবার কোনো সুযোগই নেই এবং কোনো কিছু একবার ঘটে গেলে তা সংশোধনেরও সুযোগ থাকেনা। এরকম একটা জগতে অস্তিত্বকে আপাত গুরুত্বহীনই মনে হয়। কিন্তু কেন? এটা কি আমাদের আদিম অনুশাসন, নাকি সামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রভাব? নাকি দুটোই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত? এই বোধটি সত্যিই এক অমীমাংসিত রহস্য। এবং সম্ভবত একারণেই অস্তিত্বের ওজনহীনতাকে একটা পর্যায়ে মনে হয়, অসহনীয়।
'অস্তিত্বের অসহনীয় লঘুতা'সম্পর্কে জনৈক পাঠক
'অস্তিত্বের অসহনীয় লঘুতা' সম্পর্কে জনৈক পাঠক
--------------------------------------------------
মিলান কুন্ডেরা রচিত বিখ্যাত উপন্যাস 'The Unbearable Lightness Of Being'. মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় এ-বইটি অনুবাদ করেন 'অস্তিত্বের অসহনীয় লঘুতা' নামে। দেশী ও বিদেশী বেশ কয়টি উপন্যাস আমি পড়েছি তবে এ-বইটি সবচেয়ে আলাদা। এ বইয়ের উপস্থাপন কৌশল আমাকে মুগ্ধ করেছে। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, আবেগ, অনুভূটির এক বিস্ময়কর মিশ্রণ খুঁজে পেয়েছি এ বইটিতে। আমার মনে হয় মানুষের অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছিয়ে তা অসাধারণভাবে ব্যক্ত করায় লেখক অসামান্য নিপুণতা দেখিয়েছেন। মনের অন্তর্নিহিত কথা যা হয়ত সবসময় ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হয় না, সে কথাগুলোর এতো তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখা আমাকে বিস্মিত করেছে। এ-বইটি সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় এর উপস্থাপন কৌশলের ব্যাপারে। উপন্যাসের কাহিনিগুলো সাতটি অধ্যায়ে বিভক্ত। একেকটি অধ্যায় একেকটি মনস্তাত্বিক ধাপের বিস্তৃত বর্ণনা। বইটি পড়ার সময় আমার বারবার মনে হচ্ছিল যেন লেখক আমার সাথে কথা বলছেন। লেখক ও পাঠকের যে সেতুবন্ধন তিনি তৈরি করেছেন তা অসাধারণ। বেশ কিছু জায়গায় লেখক পাঠকের সাথে সুকৌশল প্রশ্ন উত্তর অংশ রেখেছেন। সবকয়টি প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে চরিত্রগুলোর আরো ভেতরে প্রবেশ করার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। প্রতিটি চরিত্র নিজস্ব মাধুর্যে দণ্ডায়মান। একের সাথে অপরের কোনো মিল নেই।তবে তাদের জীবনের একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকার কাহিনি যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি বিস্ময়কর।
উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলো হল-টমাস,তেরেজা,সাবিনা, ফ্রানজ ও টমাস এবং তেরেজার কুকুর কারেনিন। টমাস একজন উচ্ছৃংখল প্রেমিক। যে কিনা ভালবাসাকে শুধু শারীরিক চাহিদার মাঝে সীমাবদ্ধ রেখেছে। একচ্ছত্রভাবে কারো প্রতি সমর্পিত প্রেমে সে বিশ্বাসী না। অকস্মাৎভাবে সে যে কোনো নারীর সাথে প্রেমলীলায় মত্ত হতে পারে তবে কেউ তার উপর কর্তৃত্ত্বের সম্পর্ক বজায় রাখুক তা তার পছন্দ না। তবে এক পর্যায়ে সে তেরেজার প্রতি প্রবল আবেগ অনুভব করে তবে কখনোই তার মনকে তার চিন্তা চেতনার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে দেয়নি। টমাস চরিত্রের একটি গুন আমাকে মুগ্ধ করেছে আর তা হল তার সততা এবং আত্মসম্মানবোধ। তাইতো সে ডাক্তারী পেশাকে বিদায় জানিয়ে জানালা পরিষ্কার করার কাজেও দ্বিধাবোধ করেনি।
(মূল : এন্ড্রু ব্ল্যাকম্যান)
মিলান কুণ্ডেরা |
সাদাসিধে এক তরুণী। ভালবাসে এমন একজন মানুষকে যে নিজেই কিনা তার বিশুদ্ধ প্রেম এবং দুর্নিবার নারীলিপ্সার পারস্পরিক সংঘর্ষে জর্জরিত; মানুষটির প্রেম এই তরুণীটিকে ঘিরে আবর্তিত হয়। আবার, অফুরান নারীলিপ্সার মধ্য থেকেও বিশেষ একজন পরনারীকে সে আলাদাভাবে কামনা করে। কালজয়ী উপন্যাসটির কলেবর গড়ে উঠেছে মূলত এই তিনটি চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক সংকট-সংঘাতকে উপজীব্য করেই।
আমাদের বসবাসের এই জগৎটা ভীষণ অদ্ভুত। এখানকার সবকিছুই ঘটে দৈবক্রমে, আগে থেকে জানবার কোনো সুযোগই নেই এবং কোনো কিছু একবার ঘটে গেলে তা সংশোধনেরও সুযোগ থাকেনা। এরকম একটা জগতে অস্তিত্বকে আপাত গুরুত্বহীনই মনে হয়। কিন্তু কেন? এটা কি আমাদের আদিম অনুশাসন, নাকি সামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রভাব? নাকি দুটোই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত? এই বোধটি সত্যিই এক অমীমাংসিত রহস্য। এবং সম্ভবত একারণেই অস্তিত্বের ওজনহীনতাকে একটা পর্যায়ে মনে হয়, অসহনীয়।
'অস্তিত্বের অসহনীয় লঘুতা'সম্পর্কে জনৈক পাঠক
--------------------------------------------------
মিলান কুন্ডেরা রচিত বিখ্যাত উপন্যাস 'The Unbearable Lightness Of Being'. মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয় এ-বইটি অনুবাদ করেন 'অস্তিত্বের অসহনীয় লঘুতা' নামে। দেশী ও বিদেশী বেশ কয়টি উপন্যাস আমি পড়েছি তবে এ-বইটি সবচেয়ে আলাদা। এ বইয়ের উপস্থাপন কৌশল আমাকে মুগ্ধ করেছে। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, আবেগ, অনুভূটির এক বিস্ময়কর মিশ্রণ খুঁজে পেয়েছি এ বইটিতে। আমার মনে হয় মানুষের অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছিয়ে তা অসাধারণভাবে ব্যক্ত করায় লেখক অসামান্য নিপুণতা দেখিয়েছেন। মনের অন্তর্নিহিত কথা যা হয়ত সবসময় ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হয় না, সে কথাগুলোর এতো তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখা আমাকে বিস্মিত করেছে। এ-বইটি সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় এর উপস্থাপন কৌশলের ব্যাপারে। উপন্যাসের কাহিনিগুলো সাতটি অধ্যায়ে বিভক্ত। একেকটি অধ্যায় একেকটি মনস্তাত্বিক ধাপের বিস্তৃত বর্ণনা। বইটি পড়ার সময় আমার বারবার মনে হচ্ছিল যেন লেখক আমার সাথে কথা বলছেন। লেখক ও পাঠকের যে সেতুবন্ধন তিনি তৈরি করেছেন তা অসাধারণ। বেশ কিছু জায়গায় লেখক পাঠকের সাথে সুকৌশল প্রশ্ন উত্তর অংশ রেখেছেন। সবকয়টি প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে চরিত্রগুলোর আরো ভেতরে প্রবেশ করার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। প্রতিটি চরিত্র নিজস্ব মাধুর্যে দণ্ডায়মান। একের সাথে অপরের কোনো মিল নেই।তবে তাদের জীবনের একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকার কাহিনি যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি বিস্ময়কর।
উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলো হল-টমাস,তেরেজা,সাবিনা, ফ্রানজ ও টমাস এবং তেরেজার কুকুর কারেনিন। টমাস একজন উচ্ছৃংখল প্রেমিক। যে কিনা ভালবাসাকে শুধু শারীরিক চাহিদার মাঝে সীমাবদ্ধ রেখেছে। একচ্ছত্রভাবে কারো প্রতি সমর্পিত প্রেমে সে বিশ্বাসী না। অকস্মাৎভাবে সে যে কোনো নারীর সাথে প্রেমলীলায় মত্ত হতে পারে তবে কেউ তার উপর কর্তৃত্ত্বের সম্পর্ক বজায় রাখুক তা তার পছন্দ না। তবে এক পর্যায়ে সে তেরেজার প্রতি প্রবল আবেগ অনুভব করে তবে কখনোই তার মনকে তার চিন্তা চেতনার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে দেয়নি। টমাস চরিত্রের একটি গুন আমাকে মুগ্ধ করেছে আর তা হল তার সততা এবং আত্মসম্মানবোধ। তাইতো সে ডাক্তারী পেশাকে বিদায় জানিয়ে জানালা পরিষ্কার করার কাজেও দ্বিধাবোধ করেনি।
তেরেজা নিঃস্বার্থভাবে টমাসকে ভালোবাসে। সে সারাজীবন অপেক্ষা করেছে টমাসকে সম্পুর্ণরূপে নিজের কাছে পাওয়ার তবে বারবার সে ব্যর্থ হয়েছে। কখনো সন্দেহ আবার কখনো টমাসের নারীলিপ্সার প্রমাণ তার হৃদয়কে বিদীর্ণ করেছে। তেরেজার জীবন দ্বন্দ সংঘাতের এক করুণ রূপ। বিকৃত মস্তিষ্কের মা,পরিবার,টমাস কারও কাছেই সে প্রকৃত ভালবাসা খুঁজে পায় নি। তাই জীবনের এক পর্যায়ে সে নিজের কুকুর কারেনিনকে অবলম্বন করে বাঁচার চেষ্টা করে।পশু ও মানুষের ভালবাসার অনন্য দিক এ বইয়ে উপস্থাপিত হয়েছে।
তেরেজা এবং টমাসের জীবনের ঘাত প্রতিঘাত ক্রমেই জীবনের নতুন দ্বার উন্মুখ করে দেয় যেখানে সাবিনার আগমন ঘটে। সাবিনা পেশায় একজন চিত্রশিল্পী। টমাসের সাথে তার সম্পর্ক অন্য সকল নারীর মতই। টমাসের নারীলিপ্সা সাবিনাকেও তার নিকট সমর্পিত করতে বাধ্য করে। উপন্যাসের এ পর্যায়ে শুরু হয় জীবনের আরেক অধ্যায়। সাবিনার চরিত্র ও তার জীবনের প্রতি চিন্তা, ফ্রানজের আগমন ইত্যাদি জীবনবোধের সূচনা করে। সাবিনার জীবনে 'প্রতারণা','ভালবাসা' এসব শব্দের সংগায়ন স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। আত্মিক গুরুভার ও লঘুভার মানুষের জীবনে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করে তা বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উঠে এসেছে। এ বইটিতে আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয়টি হলো জীবনের উপস্থাপনা। কারণ জীবনে কোন কিছু দ্বিতীয়বার করার সুযোগ নেই। জীবনের কোনো ভুল কাজ পুনরায় সঠিকভাবে করার সুযোগ পাওয়া যায় না কারণ মানুষের জীবন একটাই। উপন্যাসের তৃতীয় অধ্যায়ে নারী, বিশ্বস্ততার এবং বিশ্বাসভঙ্গ, সংগীত, আলো ও অন্ধকার, গোরস্থান প্রভৃতি বিষয়গুলো এক নতুন ভাব ধারায় উপস্থাপন করা হয়েছে। বিষয়গুলো সাধারণ মনে হলেও পড়ার পর জীবনকে নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার পথ খুঁজে পেয়েছি। উপন্যাসের বিভিন্ন জায়গায় লেখক পাঠককে নানা উদাহরণ বা গল্পের মাধ্যমে চরিত্রগুলোর সূক্ষাতিসূক্ষ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।
আত্মা ও শরীরের অন্তমিল এ উপন্যাসে প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। এ উপন্যাস থেকে আমি বেশ কিছু স্প্যানিশ শব্দ এবং জার্মান প্রবাদ শিখতে পেরেছি।
জীবনবোধের ধারণাগুলো আরো সহজভাবে অনুবাদ করলে হয়ত বিষয়গুলো আরো স্পষ্ট হতো। এছাড়া কিটস এবং কিটম সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। এ বিষয়গুলো আমার অজানা ছিল। বিষয়গুলো আরও ব্যাখা করলে ভালো হত। তবে উইকিপিডিয়ার কল্যাণে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছি।
সর্বোপরি অসাধারণ অনুভূতি এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিভিন্নতা উপন্যাসের প্রতিটি ধাপে নৈপুন্য সৃষ্টি করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বইয়ের অন্তর্নিহিত বিষয়গুলো অনুধাবন করে বুঝতে পেরেছি মানুষের জীবন কতই না বিচিত্র!
আরো মন্তব্য
কুণ্ডেরা উপন্যাস ধারণাকেই পাল্টে দিয়ে একে নতুন স্তরে উন্নীত করেছেন। এই স্তর গীতিকবিতার, তীব্র আবেগময়তার।
জিম মিলার, নিউজউইক
দুর্দান্ত... উচ্চতর আধুনিকতা ও গভীর বেদনাবোধের এক অনন্য দৃষ্টান্ত
জ্যানেট ম্যালকম, নিউ ইয়র্ক রিভিউ
কুণ্ডেরা এক অনবদ্য শিল্পীর নাম... সাহসিকতা, বিশুদ্ধতা এবং সমৃদ্ধশালীতার এক আদর্শ সমন্বয়।
এলিজাবেথ হার্ডিক
আমি শুধু একটা কথাই বলবো, ’আমি অভিভূত’
এন্ড্রু ব্ল্যাকম্যান, অন দ্য হলোওয়ে উপন্যাসের লেখক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন