‘প্রচারধর্মী সাহিত্য কোনো সাহিত্য নয়’
দুই বাংলাতেই তার পাঠকপ্রিয়তা সমান। জন্মস্থান এবং পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি বাংলাদেশেই। ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণকারী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখালেখির বয়স ৪০ বছরেরও বেশি। কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজের বাংলা সাহিত্যের স্নাতক (সম্মান) ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ শীর্ষেন্দু পেশায় সাংবাদিক। দীর্ঘকাল ধরে কর্মরত আছেন আনন্দবাজার গ্রুপের ‘দেশ’ পত্রিকায়। প্রথম উপন্যাসও প্রকাশিত হয় দেশ-শারদীয় সংখ্যায় (১৯৬৭)। ঘুনপোকা, মানবজমিন, পারাপার, যাও পাখি, দিন যায় প্রভৃতি উপন্যাস বাংলাসাহিত্যের পাঠকদের কাছে বিপুলভাবে নন্দিত করেছে তাকে।
এছাড়া তার অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে শ্যাওলা, লালনীল মানুষ, ফুলচোর, উজান, ক্ষয়, জাল, ফজর আলী আসছে, শিউলির গল্প, এই আমি রেনু, উজান গঙ্গা, সওয়ার, ঊনিশ শ বিশ, রক্ত মাংস নিয়ে, লক্ষ্মী পাঁচালি, বড় পাপ হে, বাসভূমি প্রভৃতি। ছোটদের জন্যও লিখেছেন অনেক। তার উল্লেখযোগ্য কিশোর উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- গৌড়ের কবচ, সোনার মেডেল, বিপিন বাবুর বিপদ, হারানো কাকাতুয়া, চক্রপুরের চক্করে, ছায়ামুখ, গোলমাল, দুধসায়রের দ্বীপ, হরিপুরের হরেক বাড়ি, পাতাল ঘর ইত্যাদি। বয়সের ভারে এতটুকু ক্লান্ত নন তিনি। এখনো লিখছেন দু’হাতে। বাংলাদেশের ঈদসংখ্যাসহ বিভিল্পম্ন পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার কাঙ্ক্ষিত লেখক তিনি। তার প্রতিটি উপন্যাস যেন জীবনের এক একটি স্তরের উন্মোচন। বিষয়ের ভিন্নতা আর বৈচিত্র্যে এবং গল্প বলার আশ্চর্য কুশলতায় এক জাদুকরি ভাষায় মুগ্ধ করেন তিনি তার পাঠকদের। চা বাগানের আদিবাসী শ্রমিক থেকে কলকাতার মধ্যবিত্ত এমনকি দরিদ্র নিম্নবিত্তসহ বাংলার লোকসমাজের বহুবর্ণিল ছবি কখনো আনন্দে, কখনো দুঃখপনার ধুসরতায় চিত্রিত তার উপন্যাসে। সাহিত্যে অবদানের জন্য পাঠকপ্রিয়তার পাশাপাশি পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা এবং স্বীকৃতি। তার কাহিনী নিয়ে হয়েছে চলচিত্র ও নাটক। পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের পুরস্কার। ১৯৮২ সালে পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। আকাদেমি পুরস্কারের মতো মর্যাদাবান পুরস্কারেও ভূষিত তিনি।
নাসির আহমেদঃ দৈনিক সমকালে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আপনার মতো একজন পাঠকনন্দিত কথাশিল্পীকে আমাদের মধ্যে পেয়ে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। কারণ বাংলাভাষার একজন অসাধারণ লেখক আপনি। কিন্তু আমাদের খুব কৌতূহল বাংলা কথাসাহিত্যের ইতিহাস যখন পশ্চিমবঙ্গে লেখা হয় তখন প্রধানত পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকদের কথাই আলোচনায় আসে। অভিন্ন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের অংশ হয়েও বাংলাদেশের সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ বা শওকত ওসমানের মতো শক্তিমান কালজয়ী লেখক বাদ পড়ছেন- ব্যাপারটি কীভাবে দেখছেন?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ আমার মনের মধ্যে কোনো বিভাজনই কাজ করে না। বিভাজনটি রাজনৈতিক। দুই বাংলার লেখকদের লেখা নিয়েই বাংলা সাহিত্য। কিন্তু এখানকার চ্যানেল ওখানে দেখা যায় না। এখানকার পত্রিকা ও বই ওখানে তেমন পাওয়া যায় না। যা-ও দু’একটা বই পাওয়া যায়, তাও নগণ্য। এ প্রতিবন্ধকতা আমাদের কাটাতে হবে, যোগাযোগের ব্যবধানটি কমিয়ে আনতে হবে। এর জন্য কার কাছে যাব, কীভাবে এ সমস্যার সমাধান হবে; সে উদ্যোগ আমাদেরই সম্মিলিতভাবে গ্রহণ করতে হবে।
নাসির আহমেদঃ কিন্তু বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের লেখকরা সমাদৃত, পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকাগুলো বা প্রকাশকদেরও কেন বাংলাদেশের সাহিত্য বিষয়ে এত অনীহা?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ আমরা এ ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করি। বিভিন্ন আড্ডায় এসব ব্যাপারে কথা হয়। প্রকাশকদের সঙ্গে যদি সঠিকভাবে যোগাযোগ এবং বই আদান-প্রদান করা যায়, তাহলে দহৃরত্ম্ব দহৃর করা যায়, আর এটা হলো বাণিজ্যিক ব্যাপার। এখানের লেখকরা তো ওখানে ওইভাবে পরিচিত নয়।
বেলাল চৌধুরীঃ এখানে আরো কিছু ব্যাপার আছে। আমাদের মুদ্রামান, আমাদের এখানে যে বই প্রকাশ হয়, এখানের সঙ্গে ওখানে অনেক তফাৎ। বুদ্ধদেব বাবু একবার বলেছিলেন, ‘আপনাদের ওখানে বাংলা একাডেমী আছে, আমরাও একটি বাংলা একাডেমী করেছি, আমরা শুরু করেছি। আপনাদের বাংলা একাডেমীর বইগুলো ওখানে অন্তত উপস্থাপন করা হোক।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ আমরাও কিন্তু আগ্রাসনের ভেতর আছি। আমাদের হলো হিন্দির আগ্রাসন। আসলে সরকার-সরকার আলোচনায় এসব সমাধান হতে পারে।
নাসির আহমেদঃ আপনারা আছেন দিল্লির প্রবল প্রভাবের চাপে। তাই পশ্চিমবঙ্গ হিন্দি আগ্রাসনের শিকার। সেক্ষেত্রে আপনাদের লেখকদের ভূমিকা কী রকম? আমাদের এখানে তো ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি, রাজপথে নেমেছি···
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ আমাদের সোচ্চার হলে তো লাভ নেই। ভুল সুইচ টিপলে কাজ হবে না। এগুলো তো রাস্ট্রীয় আন্দোলন করার ব্যাপার নয়। তাছাড়া আমাদের এখানে বই পাইরেসি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে সত্যিকার গদ্য লেখকের অভাব আছে। আমি দেশ পত্রিকায় কাজ করার সুবাদে এ ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করেছি। তরুণ তুর্কিরা আসবে। সব ভেঙে দেবে। এখন তো সাহিত্যে ওখানেও সে অবস্থা নেই।
নাসির আহমেদঃ এ সময়ের বাংলা সাহিত্য বিশেষ করে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ যেটুকু পড়ার সুযোগ পেয়েছি সেটুকুই পড়েছি। এখনো একটা ট্র্যাডিশনাল পর্যায় থাকলেও একটি ট্রানজিট পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কথাসাহিত্য যাচ্ছে। এটা পূর্ব বঙ্গীয় কোনো ব্যাপার নয়। এক ধরনের নিরীক্ষা। এটা আমি বলব, বাংলা গদ্যেরই একটি পর্যায়।
জুয়েল মাজহারঃ বাংলা সাহিত্য তথা বাংলাদেশের সাহিত্য ট্র্রাডিশনাল বা নিরীক্ষাপ্রবণতার ক্ষেত্রে তাহলে আমরা কী বুঝব? তারাশগ্ধকর থেকে শুরু করে ইলিয়াস বা সৈয়দ হককে যদি আমরা একটি বড় আয়নাতে রাখি···?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ তারাশঙ্কর তার কাজ করে চলে গেছেন। আমাদের দেশে তারাশঙ্করের লেখা ক’জন পড়ে তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ হচ্ছে, এখনকার জীবন বদলে গেছে।
বেলাল চৌধুরীঃ এখন অবশ্য একজন লেখকের শতবর্ষ এলে তাকে নিয়ে হৈচৈ হয়। তখন সে লেখাগুলোতে আবার চোখ ফেরানো যায়।
মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জুঃ আমাদের দেশে বাংলা রাষ্ট্রভাষা। অথচ এখন এ-বাংলা ও-বাংলা দু’জায়গাতেই বাংলা ভাষা পিছু হটছে। ভবিষ্যৎ কী মনে করেন?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ কর্মক্ষেত্রে বাংলাভাষা যতটা কার্যকর কিংবা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ও জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বাংলাভাষা যতটা কার্যকর, তা আজ জরুরি বিষয়; বরং বাঙালিরা বিশেষ করে ইংরেজ শাসনামলে ইংরেজি-বাংলা দু’ভাষাতেই কথা বলত। তাছাড়া আমরা যারা পশ্চিমবঙ্গে আছি, তারা তো অন্য প্রদেশে গেলেই অন্য ভাষায় কথা বলতে হয়। সেখানে তখন হিন্দি-ইংরেজি ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ইংরেজি শিখছি বলে বাংলা ভুলে যাব, তা হয় না। আমরা অনেক ভাষা শিখতে পারি। কিন্তু বাংলা ছাড়া যাবে না। এটাই আমার দাবি। আরো কিছু ব্যাপার আছে। কিছু লোক আছে যারা ইংরেজি শেখে বাংলা ভুলে যাওয়ার জন্য। সেই ইংরেজিও ভুলে ভরা। কিন্তু বিদেশে বাঙালিরা রীতিমতো বাণিজ্যিকভাবে বাংলা পত্রিকা বের করছে। শুদ্ধ বাংলায় কথা বলছে আর পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে রীতিমতো বাংলাদেশ তো স্বপ্নের দেশ, এ কারণে যে, ভাষার জন্য এ দেশে রক্ত ঝরেছে। আর বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির ভাষা বাংলা।
নাসির আহমেদঃ সাহিত্যে ফিরে আসি। আপনার সমসাময়িকদের সাহিত্য মূল্যায়ন করবেন? মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিতে যে সাহিত্য ধারা বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে, আপনাদের তা প্রভাবিত করেছে কি? কেন করলো না?
নাসির আহমেদঃ সাহিত্যে ফিরে আসি। আপনার সমসাময়িকদের সাহিত্য মূল্যায়ন করবেন? মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিতে যে সাহিত্য ধারা বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে, আপনাদের তা প্রভাবিত করেছে কি? কেন করলো না?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ আমার সমসাময়িকরা এখনো লিখছেন। তাদের আমি কীভাবে মূল্যায়ন করব? মুক্তিযুদ্ধ তো একটি স্থানের ব্যাপার। কোনো একটি বিশেষ প্রসঙ্গ, সেটা এ দেশের পাঠকরা যেভাবে অনুধাবন করবে, সেভাবে পশ্চিমবঙ্গের পাঠকরা অনুভব করবে না।
মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জুঃ আমাদের এখানে যে সাহিত্যের চর্চা হয়, তা আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে কি?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ আপনাদের এখানকার বইপত্র, লেখা খুব একটা তো পৌঁছায় না ওখানে। যাদের লেখা পৌঁছেছে, তাদের পাঠক আছে। এ অবস্থা দূর হওয়া দরকার। সাহিত্য এবং ধর্ম নিয়েও আজকাল নানা কথা ওঠে। এক সময় চীন এবং রাশিয়ায় প্রচারধর্মী সাহিত্যের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এখন একইভাবে যদি কোনো বিশ্বাস, ধর্ম বা নীতি প্রচার করে সাহিত্য করা হয়, তা তো সাহিত্য নয়। যদি কাঁচা গোবরের গল্পব্দ না থাকে, তাহলে তা তো সাহিত্য হয়ে উঠবে না। এটা ঠিক নয়। আমি আসলে কীভাবে ব্যাপারগুলো সন্ধান করছি, আমার কাজে তা লক্ষ্য করতে হবে। প্রচারধর্মী সাহিত্য কোনো সাহিত্য নয়।
আবু সাঈদ খানঃ আপনি তো মার্কসীয় দর্শন চর্চা করেছেন, সেই আপনিই ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের ভক্ত, ব্যাপারটা কীভাবে মেলাবেন?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ আপনি যদি আমাকে মার্কসবাদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, আমি বলতে পারব না। কিন্তু ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে আমি মার্কস দ্বারা আক্রান্ত হই। তার মানে এই নয় যে, আমার পুরো জীবন মার্কসীয়। আমার যখন আটাশ বছর বয়স তখন ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের সাল্পিম্নধ্যে আসি। আমি যখন বঙ্কিমচন্দ্র বা রবীন্দ্রনাথ পড়ি, তখন তাদের দ্বারা আক্রান্ত হই। কিন্তু এসব ব্যাপারের মধ্য দিয়ে গেলেও জীবন, দারিদ্র্য, সংগ্রামের কথা ও মুক্তি খোঁজার কথা হয়, সেক্ষেত্রে তা যদি কোনো দর্শন নিন্দিতভাবে উপস্থাপন হয়, তাহলে দেখার বিষয়। বড় কথা সাহিত্যবোধ সে কাজে বিকশিত হয়েছে কি-না।
আবু সাঈদ খানঃ ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের সংর্শে এলেন। এখনো ওই ধারাতেই আছেন। এ ব্যাপারে কিছু বলেন।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ আমার তো কোনো সমস্যা হয় না। আর সমস্যা হলে তো ছেড়েই দিতাম। ঠাকুরের ভাবধারা তা ইতিবাচক ভাবধারা।
আবু সাঈদ খানঃ বাংলা বানানের ক্ষেত্রে দুই দেশেই বিভিন্ন পত্রিকা বিভিন্ন বানানরীতি ব্যবহার করছে। কিংবা বাংলা সনের ক্ষেত্রেও পশ্চিম বাংলা এবং বাংলাদেশের যে পার্থক্য, একই ভাষাভাষী হওয়া সত্ত্বেও এটা কেন হবে? এ ব্যাপারে আপনার চিন্স্নাভাবনা জানতে চাচ্ছি।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ বাংলা নববর্ষের ক্ষেত্রে এ ভিল্পম্নতা থাকা উচিত নয়। আমাদের ওখানে প্রাচীন পঞ্জিকার কারণে এসব সমস্যার সৃষ্দ্বি হয়। সেক্ষেত্রে পঞ্জিকার সংস্কার করা উচিত। বানান বা ভাষারীতি ক্ষেত্রে, ভিন্নতার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক হেজিমনি থেকে এটা হচ্ছে। আমি যা বলব, যা করব তাই ঠিক- ব্যাপারটি যেন অনেকটাই এ রকম।
অশোক দাশগুপ্ত : পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠিত লেখকরা এখানকার প্রতিষ্ঠিত দু’একজন লেখকের নামই জানে। এখানকার লেখকদের বই প্রকাশের ক্ষেত্রেও অনীহা। ওখানে এক ধরনের একমুখী বাণিজ্যিকীকরণ, যেহেতু রাষ্ট্রিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যে আচরণ তাতে দুই বাংলার সাহিত্যের মেলবন্ধনের ক্ষেত্রে অন্তরায়। কিন্তু লিটল ম্যাগাজিনগুলোতে বাংলাদেশের অজস্র লেখা ছাপা হচ্ছে···।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ লিটল ম্যাগাজিনের চরিত্র এখন বদলে গেছে। এখানে আমার ঈদসংখ্যার লেখা ছাপা হলে বাংলাদেশি লেখকদের লেখা ছাপার সুযোগ হয়; কিন্তু নিরীক্ষার ছাপ না থাকলে সে লেখা পড়ে কী লাভ?
আবু সাঈদ খানঃ ১০ বছর পর বাংলাদেশে এলেন? কী পার্থক্য চোখে পড়ল?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ চারদিকে দালান উঠছে। গাছপালা কমে গেছে- বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের উত্তাপ তো ভোলার নয়। এ ক’দিনের ব্যবধানে ব্যাপক কোনো পরিবর্তন আমার চোখে পড়েনি, বাংলাদেশ হলো আবেগের দেশ।
জুয়েল মাজহারঃ আপনাদের কথার সহৃত্র ধরে বলি। পত্রিকা বা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সাহিত্যকে লালন করতে পারে। অথবা সাহিত্যকে অস্ট্বীকার করলে করতে পারে। এ রকম ভূমিকা আপনি কীভাবে দেখছেন?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ প্রতিষ্ঠানের চরিত্র এ রকমই। এর সমাধান আমাদের হাতে নেই। প্রতিষ্ঠান হয়তো নিজেই লেখক নির্বাচন করে। আর প্রতিষ্ঠান লেখককে আটকে রাখতে পারে। তবে তাকে কোনোভাবেই দমন করতে পারে না। তারপরও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা তো থাকেই। আমার ক্ষেত্রে বলা যায়, আনন্দবাজার আমাকে যথেষ্ট আনুকূল্য না দিলে এমন হতো না। আমি যেহেতু এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত, তাই বলতে পারি আনন্দবাজার নতুন লেখকের লেখা ছাপাসহ তাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্দ্বা করে থাকে।
নাসির আহমেদঃ একইসঙ্গে পাকিস্টস্নান-ভারত স্ট্বাধীন হয়েছে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে বহুবার সামরিক শাসনে চলেছে। কিন্তু ভারতে গণতন্ত্রের বিকাশ হয়েছে। এ ব্যাপারটি কীভাবে দেখছেন?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ আপনারা যা ভাবছেন আমিও তাই ভাবছি। আমার মনে হয়, সামরিক শাসন জনগণের জন্য কল্যাণকর নয়। গণতন্ত্রই হলো ঠিক কথা। বরং আমি বলতে চাই, ই ইউর মতো সার্ক অঞ্চলে পাসপোর্ট ও ভিসা তুলে দিন। একই রকম টাকা চালু হোক।
আবু সাঈদ খানঃ সমকাল পরিবারে আসার জন্য আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ঃ ধন্যবাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন