খোরশেদ আলম
অদ্বৈত মল্লবর্মণের শততম জন্মবর্ষে কথকতার আয়োজন
অনন্তের মধ্য দিয়ে লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মণের নিজস্ব বেদনা ও অনুভব সঞ্চারিত হয়েছে। এ-উপন্যাসের নায়ক অনন্ত কীনা এ-নিয়ে সংশয় জাগে। আসলে প্রথাগত উপন্যাসের কাঠামোবদ্ধ করে লেখক উপন্যাস রচনা করেননি। বাংলাদেশে কিংবা অন্যদেশেও হাজারো মালোপাড়া রয়েছে। নিম্নজীবী এসব মানুষের ভালবাসা যন্ত্রণা হাসি কান্না সবই কোথায় মিলিয়ে যায় তার হদিস কেউ রাখে না। লেখক এই জনগোষ্ঠীতে না জন্মালে এদের জীবনযাপনের ইতিহাসও থাকত শুকিয়ে যাওয়া ঝরা পাতার মত। ফলে তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাসে যা কিছু ঘন হয়ে উঠেছে তা এখানকার মানুষের নিয়ত দুঃখ-যন্ত্রণা, জীবিকার তাগিদ। আর আছে ধ্বসে যাওয়া এক বাস্তব ইতিকথা।
উপন্যাসের গঠনের দিক থেকে তিনি সচেতনভাবে কোনকিছু ভেবে অথবা সমকালীন যুগের ঔপন্যাসিকদের মত চরিত্রকে মায়াবী প্রেমের রঙতুলির আঁচড় দেয়া হয়ত সমীচীন মনে করেননি। তাঁর নিজস্ব জীবনের অভিজ্ঞতাই এ-উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহকে সত্য করে তুলেছে। একটি জনগোষ্ঠীর জীবন-মরণই সেখানে মুখ্য। লেখক নিজে শুধু অমর হয়ে থাকেননি থেকেছে তাঁর তিতাসপাড়ের মানুষ। এটাই অদ্বৈত মল্লবর্মণের এ-রচনার বিশেষত্ব।
তাঁর শিল্পের সত্য তিনি নিজে। তাই উপন্যাসের নায়ক কে তা নির্ধারণ করা একটি জটিল কর্ম ভিন্ন আর কিছু নয়। সুবল কিশোর বা অনন্ত কারো মধ্যেই আসলে প্রথাগত বাংলা উপন্যাসের নায়ক হবার গুণ নেই। আবার এটাও সত্য তারা যে কাহিনীর মহানায়ক তাতে রোমান্টিক খাপছাড়া আর দশটা নায়কের চেয়েও জীবনধর্মের বেশি কাছাকাছি। কিশোরের পাগল হওয়া, তার উন্মত্ত হওয়া, হোলীর দিনে পাগলামী করা এ-সবই নিরেট বাস্তবতার ছায়া। বাস্তবেই কোন রঙ চড়াবার কাহিনি এতে নেই।
সুবলের মৃত্যু অকালে ঝরে পড়া এক দরিদ্র পিতা-মাতার বেদনার অসীম ভারবাহী; সে-সঙ্গে সমাজ-অর্থনীতির দণ্ডমুণ্ডকর্তাদের নির্লজ্জ বাণিজ্য বেসাতির কুপরিণাম। কালোবরণরা শুধু সুবলের হত্যাকারী নয়, তারা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের নিয়ামক। সুবল-কিশোর অকালে ঝরে পড়লেও অনন্তকে উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে অনন্তের মধ্যে লেখকের ব্যক্তিজীবনের ছায়া থাকা অসম্ভব নয়। পিতৃমাতৃহীন অনন্ত লেখকের ব্যক্তিগত দুঃখবোধের মর্মসঙ্গী। অনন্তর প্রেম তার বাবা কিশোরের মতই অপরিণত। এ-উপন্যাস আসলে হয়ে উঠেছে জেলে-জীবনের গাঁথা। ফলে অনন্তবালার মধ্যে যে প্রেমের অঙ্কুর তা শুধু অপেক্ষায় নিরুদ্ধ।
অনাস্বাদিতপূর্ব প্রেমের অজানা এক রহস্যলোকের অনুভূতি অনন্তের হৃদয়ে জাগ্রত হলেও পড়াশুনার জন্য শহরে যাবার বাস্তবতা তাতে ছেদ ঘটায়। উপন্যাসের ‘ভাসমান’ উপপর্বে অদ্বৈত সে-কথার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শিক্ষার্জন কিংবা বিদ্বান হবার বাসনা তার ভেতরে জাগায় নিম্নশ্রেণির মানুষ নাপিতানী। এ ত নিম্নবিত্তের পক্ষে স্বপ্ন-সম্ভাব্যতার পথে যাত্রা সূচনা।
ফলে অনন্তকে সে কাছে নয় দূরের শহর কুমিল্লায় যেতে বলে। অনন্তবালা তাকে জোর করে নিজের বাড়িতে ধরে রাখতে চেয়েছিল। অনন্তবালার মা তার নাম বদলে রাখতে চেয়েছিল হরনাথ, ছোটখুড়ি পিতাম্বর। কিন্তু অনন্ত আর কারো শাসনে ধরা দেবে না। মাসী বাসন্তীর কাছ থেকে যার স্নেহের বাঁধন টুটে গেছে সে অনন্তের আর স্নেহের শাসন প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে আলোকময় এক পৃথিবীর দিকে অব্যহতযাত্রায় মনস্থ অনন্ত। কিন্তু আলোকিত পৃথিবীর উপাদান নিয়ে ফেরা অনন্তের ভেতর শেষপর্যন্ত থাকল হতাশা। মালোসমাজে মেয়েকে আইবুড়ি করে রাখার নিয়ম নেই। বনমালীকে যেতে হল অনন্তের খোঁজে কুমিল্লা স্টেশনে। কিন্তু সাতবছর পর অনন্তের সঙ্গে তার দেখা হয়। অনন্তকে তারা তাদের দুঃখের কাহিনী শোনায়। এ- যেন এক বিষণ্ণ বাস্তব। তাদের আরজির ভাষা লেখক তুলে ধরেন :
“...আমাদের অনন্ত না জানি কোথায় আছে। সে কি জানে না তিতাস নদী শুখাইয়া গিয়াছে, মালোরা দলছাড়া মীনের মত হইয়াছে। খাইতে পায় না মাথার ঠিক নাই। অনন্ত লেখাপড়া শিখিয়াছে, সে কেন আসিয়া গরমেন্টের কাছে চিঠি লিখিয়া, মালোদের একটা উপায় করিয়া দেয় না। হায় অনন্ত, তুমি যদি একবার আসিয়া দেখিতে তিতাসতীরের মালোদের কি দশা হইয়াছে।”
মালোদের সামাজিক ভাঙন ও সাংস্কৃতিক বিচ্যুতির পর দুর্দমনীয় প্রাকৃতিক পরিবর্তন তাদের জীবনকে করে তোলে দিশেহারা। মনুষ্যত্বের ক্রমাবনতি, মানুষে-মানুষে সম্পর্কের ভাঙন কোনকিছুর চেয়েও কম নয় তিতাসের শুকিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। নদীর শুকিয়ে যাওয়ায় মানুষের কোন হাত নেই। তারপরও বলা যায় বিজ্ঞান শিখিয়েছে নদী শাসন। কিন্তু সামাজিক নিম্নকোটীর মানুষকে রক্ষা করার জন্য যতটুকু আয়োজন প্রয়োজন তা দৃষ্টির অভাবেই ব্যাহত। তিতাসপারের একটি জনপদের ধ্বংসে কোন ক্ষতি হয় না সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের। লেখক অদ্বৈত সে প্রশ্ন অবশ্য তোলেননি তাঁর উপন্যাসে। বরং একটি জনপদের মানুষের সীমাহীন দুঃখকে যেভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং নিজস্ব অভিজ্ঞতা দ্বারা চিহ্নায়িত করেছেন তা-ই তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন।
অদ্বৈত মল্লবর্মণের ব্যক্তিজীবন থেকে জানা যায় তিনি সারাজীবন তাঁর মুষ্টিঅন্ন অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন। মালোপাড়ার কেউ তাঁর কলকাতার বাড়িতে পৌঁছালে তিনি তাদেরকে যথাসাধ্য সম্মান ও অর্থ সাহায্য করেছেন। তবুও অনন্তের মধ্যে যে বেদনাবোধের সঞ্চার তিনি করেছেন তা তাঁর নিজস্ব জনগোষ্ঠীর প্রতি ঐকান্তিক অনুভব-যাতনা। ধ্বংসপ্রাপ্ত মালোসমাজের অস্তিত্বের সঙ্গে লেখকের নিজস্ব আত্মা যেন জড়িয়ে পড়েছে।
তাই প্রশ্ন জাগে- প্রচণ্ড অসুস্থতা নিয়েও হাসপাতাল থেকে পালিয়েছিলেন কেন তিনি? এ-প্রশ্নের কোন সদুত্তর নেই। শেষাবধি তিনি কি শেকড়-সন্ধান করতে গিয়ে বাস্তুচ্যুতির দায়ে পরাজিত সত্তা? অদ্বৈত মল্লবর্মণের শেকড়চ্যুতি ঘটেছিল মালোসমাজের ধ্বংস হবার সঙ্গে সঙ্গে। সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ লেখক অদ্বৈত স্বল্পায়ু হয়ে তাই নিরব অভিমানে বিদায় নিলেন।
তিতাস একটি নদীর নাম Cinema প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমস্ :
লেখক পরিচিতি :
খোরশেদ আলম, গল্পকার, প্রাবন্ধিক
পেশা : শিক্ষকতা, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
খোরশেদ আলম
অদ্বৈত মল্লবর্মণের শততম জন্মবর্ষে কথকতার আয়োজন
অনন্তের মধ্য দিয়ে লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মণের নিজস্ব বেদনা ও অনুভব সঞ্চারিত হয়েছে। এ-উপন্যাসের নায়ক অনন্ত কীনা এ-নিয়ে সংশয় জাগে। আসলে প্রথাগত উপন্যাসের কাঠামোবদ্ধ করে লেখক উপন্যাস রচনা করেননি। বাংলাদেশে কিংবা অন্যদেশেও হাজারো মালোপাড়া রয়েছে। নিম্নজীবী এসব মানুষের ভালবাসা যন্ত্রণা হাসি কান্না সবই কোথায় মিলিয়ে যায় তার হদিস কেউ রাখে না। লেখক এই জনগোষ্ঠীতে না জন্মালে এদের জীবনযাপনের ইতিহাসও থাকত শুকিয়ে যাওয়া ঝরা পাতার মত। ফলে তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাসে যা কিছু ঘন হয়ে উঠেছে তা এখানকার মানুষের নিয়ত দুঃখ-যন্ত্রণা, জীবিকার তাগিদ। আর আছে ধ্বসে যাওয়া এক বাস্তব ইতিকথা।
উপন্যাসের গঠনের দিক থেকে তিনি সচেতনভাবে কোনকিছু ভেবে অথবা সমকালীন যুগের ঔপন্যাসিকদের মত চরিত্রকে মায়াবী প্রেমের রঙতুলির আঁচড় দেয়া হয়ত সমীচীন মনে করেননি। তাঁর নিজস্ব জীবনের অভিজ্ঞতাই এ-উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহকে সত্য করে তুলেছে। একটি জনগোষ্ঠীর জীবন-মরণই সেখানে মুখ্য। লেখক নিজে শুধু অমর হয়ে থাকেননি থেকেছে তাঁর তিতাসপাড়ের মানুষ। এটাই অদ্বৈত মল্লবর্মণের এ-রচনার বিশেষত্ব।
তাঁর শিল্পের সত্য তিনি নিজে। তাই উপন্যাসের নায়ক কে তা নির্ধারণ করা একটি জটিল কর্ম ভিন্ন আর কিছু নয়। সুবল কিশোর বা অনন্ত কারো মধ্যেই আসলে প্রথাগত বাংলা উপন্যাসের নায়ক হবার গুণ নেই। আবার এটাও সত্য তারা যে কাহিনীর মহানায়ক তাতে রোমান্টিক খাপছাড়া আর দশটা নায়কের চেয়েও জীবনধর্মের বেশি কাছাকাছি। কিশোরের পাগল হওয়া, তার উন্মত্ত হওয়া, হোলীর দিনে পাগলামী করা এ-সবই নিরেট বাস্তবতার ছায়া। বাস্তবেই কোন রঙ চড়াবার কাহিনি এতে নেই।
সুবলের মৃত্যু অকালে ঝরে পড়া এক দরিদ্র পিতা-মাতার বেদনার অসীম ভারবাহী; সে-সঙ্গে সমাজ-অর্থনীতির দণ্ডমুণ্ডকর্তাদের নির্লজ্জ বাণিজ্য বেসাতির কুপরিণাম। কালোবরণরা শুধু সুবলের হত্যাকারী নয়, তারা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের নিয়ামক। সুবল-কিশোর অকালে ঝরে পড়লেও অনন্তকে উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে অনন্তের মধ্যে লেখকের ব্যক্তিজীবনের ছায়া থাকা অসম্ভব নয়। পিতৃমাতৃহীন অনন্ত লেখকের ব্যক্তিগত দুঃখবোধের মর্মসঙ্গী। অনন্তর প্রেম তার বাবা কিশোরের মতই অপরিণত। এ-উপন্যাস আসলে হয়ে উঠেছে জেলে-জীবনের গাঁথা। ফলে অনন্তবালার মধ্যে যে প্রেমের অঙ্কুর তা শুধু অপেক্ষায় নিরুদ্ধ।
অনাস্বাদিতপূর্ব প্রেমের অজানা এক রহস্যলোকের অনুভূতি অনন্তের হৃদয়ে জাগ্রত হলেও পড়াশুনার জন্য শহরে যাবার বাস্তবতা তাতে ছেদ ঘটায়। উপন্যাসের ‘ভাসমান’ উপপর্বে অদ্বৈত সে-কথার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শিক্ষার্জন কিংবা বিদ্বান হবার বাসনা তার ভেতরে জাগায় নিম্নশ্রেণির মানুষ নাপিতানী। এ ত নিম্নবিত্তের পক্ষে স্বপ্ন-সম্ভাব্যতার পথে যাত্রা সূচনা।
ফলে অনন্তকে সে কাছে নয় দূরের শহর কুমিল্লায় যেতে বলে। অনন্তবালা তাকে জোর করে নিজের বাড়িতে ধরে রাখতে চেয়েছিল। অনন্তবালার মা তার নাম বদলে রাখতে চেয়েছিল হরনাথ, ছোটখুড়ি পিতাম্বর। কিন্তু অনন্ত আর কারো শাসনে ধরা দেবে না। মাসী বাসন্তীর কাছ থেকে যার স্নেহের বাঁধন টুটে গেছে সে অনন্তের আর স্নেহের শাসন প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে আলোকময় এক পৃথিবীর দিকে অব্যহতযাত্রায় মনস্থ অনন্ত। কিন্তু আলোকিত পৃথিবীর উপাদান নিয়ে ফেরা অনন্তের ভেতর শেষপর্যন্ত থাকল হতাশা। মালোসমাজে মেয়েকে আইবুড়ি করে রাখার নিয়ম নেই। বনমালীকে যেতে হল অনন্তের খোঁজে কুমিল্লা স্টেশনে। কিন্তু সাতবছর পর অনন্তের সঙ্গে তার দেখা হয়। অনন্তকে তারা তাদের দুঃখের কাহিনী শোনায়। এ- যেন এক বিষণ্ণ বাস্তব। তাদের আরজির ভাষা লেখক তুলে ধরেন :
“...আমাদের অনন্ত না জানি কোথায় আছে। সে কি জানে না তিতাস নদী শুখাইয়া গিয়াছে, মালোরা দলছাড়া মীনের মত হইয়াছে। খাইতে পায় না মাথার ঠিক নাই। অনন্ত লেখাপড়া শিখিয়াছে, সে কেন আসিয়া গরমেন্টের কাছে চিঠি লিখিয়া, মালোদের একটা উপায় করিয়া দেয় না। হায় অনন্ত, তুমি যদি একবার আসিয়া দেখিতে তিতাসতীরের মালোদের কি দশা হইয়াছে।”
মালোদের সামাজিক ভাঙন ও সাংস্কৃতিক বিচ্যুতির পর দুর্দমনীয় প্রাকৃতিক পরিবর্তন তাদের জীবনকে করে তোলে দিশেহারা। মনুষ্যত্বের ক্রমাবনতি, মানুষে-মানুষে সম্পর্কের ভাঙন কোনকিছুর চেয়েও কম নয় তিতাসের শুকিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। নদীর শুকিয়ে যাওয়ায় মানুষের কোন হাত নেই। তারপরও বলা যায় বিজ্ঞান শিখিয়েছে নদী শাসন। কিন্তু সামাজিক নিম্নকোটীর মানুষকে রক্ষা করার জন্য যতটুকু আয়োজন প্রয়োজন তা দৃষ্টির অভাবেই ব্যাহত। তিতাসপারের একটি জনপদের ধ্বংসে কোন ক্ষতি হয় না সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের। লেখক অদ্বৈত সে প্রশ্ন অবশ্য তোলেননি তাঁর উপন্যাসে। বরং একটি জনপদের মানুষের সীমাহীন দুঃখকে যেভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং নিজস্ব অভিজ্ঞতা দ্বারা চিহ্নায়িত করেছেন তা-ই তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন।
অদ্বৈত মল্লবর্মণের ব্যক্তিজীবন থেকে জানা যায় তিনি সারাজীবন তাঁর মুষ্টিঅন্ন অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন। মালোপাড়ার কেউ তাঁর কলকাতার বাড়িতে পৌঁছালে তিনি তাদেরকে যথাসাধ্য সম্মান ও অর্থ সাহায্য করেছেন। তবুও অনন্তের মধ্যে যে বেদনাবোধের সঞ্চার তিনি করেছেন তা তাঁর নিজস্ব জনগোষ্ঠীর প্রতি ঐকান্তিক অনুভব-যাতনা। ধ্বংসপ্রাপ্ত মালোসমাজের অস্তিত্বের সঙ্গে লেখকের নিজস্ব আত্মা যেন জড়িয়ে পড়েছে।
অদ্বৈত মল্লবর্মণের ব্যক্তিজীবন থেকে জানা যায় তিনি সারাজীবন তাঁর মুষ্টিঅন্ন অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন। মালোপাড়ার কেউ তাঁর কলকাতার বাড়িতে পৌঁছালে তিনি তাদেরকে যথাসাধ্য সম্মান ও অর্থ সাহায্য করেছেন। তবুও অনন্তের মধ্যে যে বেদনাবোধের সঞ্চার তিনি করেছেন তা তাঁর নিজস্ব জনগোষ্ঠীর প্রতি ঐকান্তিক অনুভব-যাতনা। ধ্বংসপ্রাপ্ত মালোসমাজের অস্তিত্বের সঙ্গে লেখকের নিজস্ব আত্মা যেন জড়িয়ে পড়েছে।
তাই প্রশ্ন জাগে- প্রচণ্ড অসুস্থতা নিয়েও হাসপাতাল থেকে পালিয়েছিলেন কেন তিনি? এ-প্রশ্নের কোন সদুত্তর নেই। শেষাবধি তিনি কি শেকড়-সন্ধান করতে গিয়ে বাস্তুচ্যুতির দায়ে পরাজিত সত্তা? অদ্বৈত মল্লবর্মণের শেকড়চ্যুতি ঘটেছিল মালোসমাজের ধ্বংস হবার সঙ্গে সঙ্গে। সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ লেখক অদ্বৈত স্বল্পায়ু হয়ে তাই নিরব অভিমানে বিদায় নিলেন।
তিতাস একটি নদীর নাম Cinema প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমস্ :
লেখক পরিচিতি :
খোরশেদ আলম, গল্পকার, প্রাবন্ধিক
পেশা : শিক্ষকতা, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন